শেরপুরের ঐতিহাসিক পটভূমি
শেরপুরের পূর্ব কথার কিছু উল্লেখ না করলে অনেক জানার বিষয় অজানাই থেকে যাবে। কাজেই অতি সংক্ষেপে তার বর্ণনা দেয়া হল। প্রাচীন কামরুপ রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের আদি নাম পাওয়া যায় না। তবে এ অঞ্চলের হিন্দু শাসক দলিপ সামন্তের রাজ্যের রাজধানী গড় জরিপার উল্লেখ আছে। সম্রাট আকবরের সময় এ অঞ্চলের নাম দশ কাহনীয়া বাজু বলে ইতিহাসে পাওয়া যায়। শেরপুর পৌরসভার দক্ষিণ সীমান্তে মৃগী নদী হতে জামালপুর ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৮/৯ মাইল প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব নাম ছিল লৌহিত্য সাগর। নদের উভয় পাড়ের নিকটবর্তী লোকদের প্রায় সময়ই নৌকায় যাতায়াত করতে হত। তারা খেয়া ঘাটের ইজারাদারের সহিত যাতায়াত মাশুল হিসবে বাৎসরিক চুক্তি অনুযায়ী ১০(দশ) কাহন কড়ি প্রদান করত। সে হিসেবেই এ অঞ্চলের নাম হয় দশকাহনীয়া। তৎকালে কড়ির মাধ্যমে বেচা-কেনা বা আর্থিক লেনদেন করা হত।
বাংলার নবাবী আমলে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজী দশ কাহনিয়া অঞ্চল দখল করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। এই শেরআলী গাজীর নামে দশ কাহনিয়ার নাম হয় শেরপুর। তখনও শেরপুর রাজ্যের রাজধানী ছিল গড়জরিপা। বর্তমান গাজীর খামার ইউনিয়নের গিদ্দা পাড়ায় ফকির বাড়ীতে শের আলী গাজীর মাজার এবং নকলা উপজেলার রুনী গাঁয়ে গাজীর দরগাহ অবস্থিত । বৃটিশ আমলে এবং পাকিস্তান আমলে নাম হয় শেরপুর সার্কেল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেরপুরকে ৬১ তম জেলা ঘোষণা করেন। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তা স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শেরপুরকে মহকুমা, ১৯৮৪ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদ শেরপুরকে জেলায় উন্নীত করে জেলার ৫ টি থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করেন। জমিদারী আমলে ১৮৬৯ সালে শেরপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ হতে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত শেরপুরবাসীর একটানা দীর্ঘ একশত বৎসরের সংগ্রামের ইতিহাস। এ সংগ্রাম প্রত্যক্ষভাবে পরিচালিত হয়েছিল প্রজাদের উপর জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং পরোক্ষভাবে অনেক ক্ষেত্রে ইংরেজ শাসনের উচ্ছেদ কল্পে। একসময় পাগল পন্থী নেতা টিপু পাগল শেরপুরের ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রই স্থাপন করেছিলেন। কংশ নদীর তীরবর্তী লেটির কান্দা গ্রামে এখন তাঁর বংশধররা পাগল বাড়িতে বসবাস করছে। জমিদারদের অত্যাচারের বিরূদ্ধে প্রজারা প্রায় সময়ই আন্দোলনে লিপ্ত থাকত। আন্দোলনগুলোর মধ্যে ছিল বক্সারী বিদ্রোহ, প্রজা আন্দোলন , কৃষক আন্দোলন , ক্ষএিয় আন্দোলন।
ফকির বিদ্রোহঃ এতদঞ্চলে ফকির বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোনাবানু ফকির। তার বংশধররা বর্তমানে গাজীরখামার গিদ্দাপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। শের আলী গাজী এদের আশ্রয়েই মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত আধ্যাত্মিক জীবন কাটিয়েছেন।
টঙ্ক আন্দোলনঃ জমিদাররা প্রজাদের নিকট হতে একর প্রতি পাঁচ মণ ধান এবং নগদ ১৫ টাকা খাজনা আদায় করত। নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান উৎপাদিত না হলেও তা দিতে হতো। এ বিধান রহিত করার জন্য প্রজারা আন্দোলন করেছিল।
নানকার আন্দোলনঃ দরিদ্র প্রজারা জমিদারদের বাড়িতে শারীরিক পরিশ্রম করার পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি ভোগদখল করত। পরিশ্রম করতে অক্ষম হলে জমিও ছেড়ে দিতে হত। জমিদারদের বিরুদ্ধে উক্ত টঙ্ক ও নানকার আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন বাবু রবি নিয়োগী, খন্দকার মজিবর রহমান, জনাব আব্দুর রশিদ, ছফিল উদ্দীন প্রমুখ।
আদিস্থান আন্দোলনঃ শেরপুরের আদিবাসী উপজাতিদের উদ্যোগে ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তরাংশে গারো পাহাড় পর্যন্ত একটি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের দাবীতে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আদিবাসী নেতা জলধর পাল এবং তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির কয়েকজন সদস্য এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ সমস্ত আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক সমস্যার বৈষম্য দূরীকরণ ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।
স্বাধীনতা আন্দোলনঃ ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্ববানে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন তৎসঙ্গে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। শেরপুরেও একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় এবং পরিষদের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আহ্ববানে যুদ্ধ প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য সর্ব প্রথম ১২ জন নির্ভীক বালক স্থানীয় আড়াই আনীন বাড়ীতে (বর্তমানে মহিলা কলেজ ) সুবেদার আব্দুল হাকিমের কাছে অস্ত্র ধারণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। শেরপুর অঞ্চলের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব এড. আনিসুর রহমান(শেরপুর – শ্রীবরদী), জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব আব্দুল হাকিম (নকলা-নালিতাবাড়ী), প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য জনাব নিজাম উদ্দীন আহমদ (শেরপুর), প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য জনাব আব্দুল হালিম (শ্রীবরদী)। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকদের মধ্যে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জনাব এড. আব্দুস সামাদ, জনাব মুহসীন আলী মাস্টার , বাবু রবি নিয়োগী, জনাব আব্দুর রশিদ , জনাব আমজাদ আলী মাস্টার, জনাব এমদাদুল হক হীরা মিয়া, জনাব অধ্যাপক আবু তাহের, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জনাব আমজাদ হোসেন, জনাব আবুল কাসেম, মোঃ হাবিবুর রহমান, নকলার অধ্যাপক মিজানুর রহমান, মোজাম্মেল হক মাস্টার এবং ডাঃ নাদেরুজ্জামান।
পল্লী অঞ্চল ও শহর অঞ্চলে মক্তব মাদ্রাসা, উচ্চ প্রাইমারি ও নিম্ন প্রাইমারি জুনিয়র মাদ্রাসা, মাইনর স্কুল, সাংস্কৃতিক টোল ছিল। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিলনা। শেরপুরের নয়আনী জমিদারদের উদ্যোগে সর্ব প্রথম একটি মধ্য ইংরেজী স্কুল স্থাপন করা হয়। ১৮৮৭ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার জুবিলী উৎসব উপলক্ষে সে স্কুলটিকে হাইস্কুলে উন্নীত করা হয় এবং নাম রাখা হয় ভিক্টোরিয়া একাডেমী। আড়াই আনী ও পৌনে তিনআনী জমিদারদের উদ্যোগে ১৯১৮/১৯ সালে গোবিন্দ কুমার পিস মেমোরিয়াল (জি,কে,পি,এম) নামে আরও একটি স্কুল স্থাপিত হয়।
নয়আনী জমিদার চারুচন্দ্র চৌধুরীর চারু প্রেস নামে একটি ছাপাখানা ছিল। এ চারু প্রেসেই মীর মোশারফ হোসেনের বিষাদ সিদ্ধু গ্রন্থটি প্রথম মুদ্রিত হয়েছিল।
পাকিস্তান আমলে ১৯৪৯ সালে শেরপুর বালিকা বিদ্যালয়, ১৯৫৭ সালে সরকারী কৃষি প্রশিক্ষায়তন, ১৯৬৪ সালে শেরপুর কলেজ এর পরে এস.এম. মডেল স্কুল, প্রতি উপজেলায় হাইস্কুল , স্বাধীনতা উত্তরকালে শেরপুর মহিলা কলেজ, ডাঃ সেকান্দর আলী কলেজ, পলিটেকনিক স্কুল, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছাড়াও শেরপুর জেলার প্রতি উপজেলাগুলোতেও অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেরপুর তেরাবাজার জামিয়া সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসাটি জেলার বৃহত্তম কওমি মাদ্রাসা। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার কারিকুলাম অনুসারে এতে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত শিক্ষাক্রম পরিচালিত হয়।
প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে গড়জড়িপার বার দুয়ারী মসজিদ, মাইসাহেবার মসজিদ ও খরমপুর জামে মসজিদ দুটি ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ। দরবেশ মীর আব্দুল বাকীর সততায় মুগ্ধ হয়ে সুসঙ্গের মহারাজা তাকে মসজিদ সংলগ্ন ২৭ একর জমি দান করেছিলেন। আব্দুল বাকীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ছালেমুন নেছা মাই সাহেবার সময় তিনআনী জমিদার রাধা বল্লাভ চৌধুরী মসজিদের আট শতাংশ জমি বাদে সম্পূর্ণ জমিই জবর দখল করেন। শেরপুর শহরে আধ্যাত্মিক পাগল মমিন সাহেব একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন।
পক্ষান্তরে পৌনে তিনআনী জমিদার সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী শেরপুরের অবিসংবাদিত মুসলমান নেতা খান সাহেব আফছর আলী মিয়া সাহেবের মাধ্যমে খড়মপুর জামে মসজিদের নামে স্থানটুকু দান করেন। প্রাচীন তিনটি মন্দিরের মধ্যে একটি শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউর মন্দির আড়াই আনী বাড়ীর মহিলা কলেজ সংলগ্ন অপর দুটি যথাক্রমে শ্রী শ্রী মা ভবতারা মন্দির নয়আনী বাজারে এবং শ্রী শ্রী প্যারিমোহন মন্দির তিন আনী বাড়ীর শেরপুর কলেজ সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। শেরপুর রোটারী ক্লাব ও রেড ক্রিসেন্ট রোডে শনি মন্দিরটি অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ মন্দির হিসেবে শেরপুরে পরিচিত।
শেরপুর পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী ৪টি বাজার প্রতি সপ্তাহে বসত। সেগুলি ছিল নয়আনী বাজার, রঘুনাথ বাজার, তেরাবাজার ও তিনানী বাজার। পৌরসভার দক্ষিণ পশ্চিম কোণায় শহরের বড় একটি পাট গুদাম ছিল।
ঐতিহ্যবাহী তথ্যজড়িত বিষয়গুলোর মধ্যে আছে বর্তমান শেরপুর পৌর এলাকার পশ্চিমাংশে একটি গ্রামের নাম কসবা। এর আরবী মুল শব্দ কসবাহ এবং এর অর্থ শহর হতে ছোট কিন্তু গ্রামের মধ্যে বড় সমৃদ্ধশালী গ্রাম। মোগল আমলে বাঙ্গলার সুবেদার শাহজাদা সুজা এ কসবাতেই তার আঞ্চলিক প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। চারদিকে পরিখাবেষ্টিত মোগলবাড়ী, কাছারী পাড়া , তার পশ্চিমে কাঠগড়, তার উত্তর পশ্চিমে বিচারক কাজীদের বসতবাড়ী কাজী গলী, কাজী গলী মসজিদ, দরবেশ শাহ কামালের দরগাহ, ধোপা ঘাট,নাপিত বাড়ী নামের স্থানগুলোর মাধ্যমে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। তারও আগে বার ভূঁইয়া নেতা ঈসা খান হাজরাদীর কোচ রাজা লক্ষণ হাজোকে পরাজিত করে হাজারাদী দখল করেন এবং ব্রহ্মপুত্রের উজান পথে দশকাহনীয়া বাজু বা বর্তমান শেরপুরে আরও দুটি দুর্গ নির্মাণ করেন।
রাজা লক্ষণ হাজো তার লোক-লস্করদের নিয়ে ভারতের বিহার প্রদেশের উত্তর -পূর্বাংশে চলে যায় এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করে । তাদের নামেই এ অঞ্চলের নাম হয় কোচ বিহার। ঠিক সে সময়ই ঈশা খাঁর শক্তি বৃদ্ধির কাহিনী শুনে সম্রাট আকবর ঈশা খানকে দমন করার জন্য রাজপুত বীর সেনাপতি মানসিংহকে এ অঞ্চলে প্রেরণ করেন।
শেরপুর পৌর এলাকার উত্তরাংশে কালীগঞ্জে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ছিল। আসামের দক্ষিণাঞ্চল, পশ্চিমে দেওয়ানগঞ্জ হতে পূর্বে নেত্রকোনা পর্যন্ত বিচার কার্য ও শাসন সংরক্ষণ এ কেন্দ্র হতেই সম্পন্ন হত। এই কালীগঞ্জেই সেনানিবাস ছিল এবং নিকটস্থ মোবারকপুর গ্রামে কোদালঝাড়া নামক উঁচু টিলার উপর সামরিক কসরৎ পরিচালনা করা হত। জনশ্রুতি আছে যে, পার্শ্ববর্তী ইচলী বিল ও গড়জরিপার কালীদহ সাগর খননকালে শ্রমিকেরা এখানে একত্র হয়ে তাদের কোদালের মাটি ঝেড়ে ফেলত। তাতেই ঐ টিলাটির সৃষ্টি হয় এবং নামকরণ করা হয় কোদাল ঝাড়া। কোদাল ঝাড়ার দক্ষিণে মীরগঞ্জে মৃগী নদীর পূর্ব তীরে থানা ছিল। পরবর্তীকালে থানা কার্যালয়টি শহরের পূর্ব দক্ষিণে স্থাপিত হয়। থানাঘাট নামটি এখনও রয়ে গেছে।
বৃটিশ আমলের শুরু থেকেই শেরপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ ছিল। শেরপুরের অনেক উচ্চশিক্ষিত পন্ডিত ব্যক্তির মাধ্যমে সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে শেরপুর পাক- ভারত বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাঁদের মধ্যে বাগরাকসার অধিবাসী চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার মহাশয়ের নাম বিশেষভাবে উল্লোখযোগ্য। শেরপুরের নাট্য সংগঠনগুলোও নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে প্রায় সব সময়ই লোকদের আনন্দ দিত।
খেলাধূলার দিক দিয়েও শেরপুর কোন সময়ই পিছিয়ে ছিল না। জনপ্রিয় খেলাধূলার মধ্যে ফুটবল ছিল পীঠস্থানে। তৎকালীন ফুটবল খেলোয়ারদের মধ্যে হযরত আলী মৃধা, মোহাম্মদ আলী, রাইচরণ সাহা, সৈয়দ আঃ খালেক, শামছুল গণি চৌধুরী, ঝন্টু মৈত্র, মজিবুর রহমান, টুরু মিয়া, কালা বল, ছানা বোস প্রমুখ অন্যতম। অন্যান্য খেলাধুলার মধ্যে বর্ষাকালে নৌকা বাইচ, খড়ায় ঘোড়ার দৌড়, বলদের দৌড়, হা-ডু-ডু, মহেলদার , বৌছির খেলা মহরমের সময় লাঠি খেলা, তলোয়ার খেলায় মেতে উঠতো সর্বত্র।
বাজারদরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এক মণ ধানের দাম ছিল ১ টাকা। আনুপাতিক হারে অন্যান্য জিনিসের দামও খুবই কম ছিল। সরকারি প্রাইমারী স্কুলের হেডমাস্টারের বেতন ছিল ১০ টাকা। মোগল আমলের স্থাপত্য শিল্পের নমুনা ধারণ করে ১৯৬৯ সালে শের আলী গাজী স্মরণে নির্মিত তোরণটি বহিরাগত মেহমানদের স্বাগত জানাবার জন্য স্থানীয় জি,কে পাইলট বিদ্যালয়ের পূর্ব দক্ষিণে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৩৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরুর পূর্বক্ষণে সম্ভবত এপ্রিল মাসে তৎকালীন ফরওয়ার্ড ব্লকনেতা সুভাষ চন্দ্র বসু (যে ব্লকের শ্লোগান ছিল জয় হিন্দ) শেরপুরে আগমন করেন। প্রথমে তিনি স্কুলের হলরুমে শিক্ষক-ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পরে তৎকালীন মুনসেফ কোর্টের উকিল বারে, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলা ভাষায় স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত শেরপুরের সন্তান জিতেন সেন, সদ্য আন্দামান ফেরৎ রবি নিয়োগী, হিন্দু মুসলমান নেতৃবৃন্দের সহিত মত বিনিময় করেন। পরবর্তীকালে খান সাহেব আফছর আলী মিয়া, তৎকালীন এম,এল,এ খান বাহাদুর ফজলুর রহমান, কামারেরচর কৃষাণ নেতা খুস মাহমুদ চৌধুরীর আহ্বানে কুসুমহাটিতে এক প্রজা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য শেরে বাংলা এ,কে ফজলুল হক, সিরাজগঞ্জের আসাদ উদ-দৌলা সিরাজী, ধনবাড়ীর নবাব হাসান আলী চৌধুরী, যশোরের অবিভক্ত বাঙ্গলার প্রাক্তন মন্ত্রী সৈয়দ নওশের আলী, কুষ্টিয়ার শামছুদ্দীন এবং প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবুল মনসুর এ পথেই শেরপুর এসেছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্ত ফ্রন্ট ইলেকশনের সময় শেরে বাংলা এ,কে, ফললুল হক, শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দী , মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং আইউব খানের শাসন আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ পথেই শেরপুরে পদার্পণ করেছিলেন। |
ভৌগলিক অবস্থানঃ | 25˙18˝ 24˜ – 24˙ 5˝ 9˜ উত্তর অক্ষাংশ এবং 90˙ 18˝ 26˜ – 89˙ 52˝ 56˜ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ | |
সীমানা | উত্তরে মেঘালয়, দক্ষিণ ও পশ্চিমে জামালপুর জেলা ও পূর্ব দিকে ময়মনসিংহ জেলা | |
আর্ন্তজাতিক সীমানা | ৩০ কি:মি: | |
শেরপুর জেলার নামকরণ | বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে মেঘালয়ের তুষার-শুভ্র মেঘপুঞ্জ ও নীল গারো পাহাড়ের স্বপ্নপটে, মানস সরোবর থেকে হিমালয় ছুঁয়ে নেমে আসা ব্রহ্মপুত্র এবং ভোগাই, নিতাই, কংশ, সোমেশ্বরী ও মালিঝির মত অসংখ্য জলস্রোতের হরিৎ উপত্যকায় গড়ে ওঠা প্রাচীন জনপদ শেরপুর। শেরপুর থেকে জামালপুর পর্যন্ত ১০ (দশ) মাইল প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র পারাপারের জন্য কড়ি নির্ধারিত ছিল দশকাহন। এ থেকে ব্রহ্মপুত্র উত্তর-পূর্ববর্তী পরগনার নাম হয় দশকাহনীয়া বাজু। অনুমিত হয় খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতকে এ বাজুর জায়গীরদার হয়ে গাজীবংশের শের আলী গাজী বর্তমান গাজীর খামার বা গড়জড়িপা হতে ২১ বৎসরকাল তাঁর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। আর এই কিংবদন্তি শাসকের নামে এ এলাকার নামকরণ করা হয় শেরপুর। | |
প্রতিষ্ঠা | ২২/০২/১৯৮৪ খ্রিঃ | |
উপজেলার সংখ্যা | ০৫টি (শেরপুর সদর, নকলা, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী) | |
সংসদীয় এলাকা | সংসদীয় আসন ১৪৩ শেরপুর-১ ( শেরপুর সদর), সংসদীয় আসন ১৪৪ শেরপুর-২ (নকলা, নালিতাবাড়ী), সংসদীয় আসন ১৪৫ শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী) | |
জনসংখ্যা | মোট জনসংখ্যা- ১৫,৪২,৬১০ জন পুরুষ- ৭,৯০,৩৯৮ জন মুসলিম- ১২৩৪৮৩৪ জন নৃ-জনগোষ্ঠী – ১৯৯২৩ জন গ্রামে বাসকারী- ১২,৪৩,৩৭১(৭৮%) জন্মহার (প্রতি হাজারে)- ২৪.৫ | জনসংখ্যার ঘনত্ব- ১০৩২ মহিলা- ৭,৫২,২১২ জন হিন্দু- ৩৪১১২ জন অন্যান্য- ১২৪৩ জন শহরে বাসকারী- ২,৯৯,২৩৯ (২২%) মৃত্যুহার (প্রতি হাজারে)- ৭.৬ |
মোট খানার সংখ্যা | ৩,৬২,১৫৪ টি | |
মোট পরিবারের সংখ্যা | ৩৩৫৩৫৩ টি | |
উপজেলা ডাকঘর | ০৪ টি | |
সাব পোস্ট অফিস | ০৪ টি | |
সরকারি (এতিমখানা) শিশুসদন | ০১টি | |
বেসরকারি এতিমখানা | ৪৮ টি | |
ধর্মীয় উপাসনা | মসজিদ- ১৭৪৯ ঈদগাহ মাঠ- ১৭৫ | মন্দির- ৫৮ গীর্জা- ২৯ |
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ | ০২ টি | |
শহীদ মিনার | ১৫টি | |
সরকারি পাবলিক লাইব্রেরী | ০১ টি | |
বেসরকারি পাবলিক লাইব্রেরী | ৩৫টি | |
প্রেসক্লাব | ০১টি | |
এনজিও | ৫৭টি | |
দৈনিক পত্রিকা | ০৩টি | |
সাপ্তাহিক পত্রিকা | ০৩টি | |
জেলখানা | ০১টি | |
স্টেডিয়াম | ০২টি | |
সার্কিট হাউস | ০১টি | |
রেস্ট হাউস | ০৫টি | |
হোটেল (আবাসিক) | ২৭টি | |
রেস্টুরেন্ট | ৫৪০টি | |
অডিটরিয়াম | ০১টি | |
সিনেমা হল | ১৫টি | |
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প | ৪৭৫টি | |
বিসিক | ০১টি | |
স্থানীয় সরকার সংক্রান্তঃ | ||
উপজেলা সংখ্যা | ৫ ( সদর, নকলা, নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতি, শ্রীবরদী) | |
পৌরসভা | ৪ ( শেরপুর, নকলা, নালিতাবাড়ি, শ্রীবরদী) | |
ইউনিয়ন | ৫২ টি | |
গ্রাম | ৬৭৮ টি | |
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্তঃ | ||
জেলা হসপিটালের সংখ্যা | ০১ টি (২৫০ শয্যাবিশিষ্ট) | |
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংখ্যা | ০৪ টি | |
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকের সংখ্যা | ৩৮ টি | |
প্রাইভেট ক্লিনিকের সংখ্যা | ০৫ টি | |
বেসরকারি ক্লিনিকের সংখ্যা | ০৩ টি | |
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সংখ্যা | ০১ টি | |
কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা | ১৬১টি | |
মোট সক্ষম দম্পতির সংখ্যা | ৩,০৯,১৩৪ | |
সর্বমোট পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণকারীর সংখ্যা | ২,৫০,৭০৬ | |
জন্মনিরোধ পদ্ধতি গ্রহণকারীর হার | ৮১.০৯% | |
স্যানিটেশন কভারেজ | ৯১.৩৩% | |
শিক্ষা সংক্রান্তঃ | ||
শিক্ষার হার | ৪৮.০৪% | |
ঝরে পড়ার হার | ১৩.৬৯% | |
সরকারি কলেজের সংখ্যা | ০২ টি | |
সরকারি মহিলা কলেজের সংখ্যা | ০১ টি | |
বেসরকারি কলেজের সংখ্যা | ১৮ টি | |
বেসরকারি মহিলা কলেজের সংখ্যা | ০৫ টি | |
সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা- | ০১টি | |
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা | ০২টি | |
বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা | ১৩৩ টি | |
বেসরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা | ১৭ টি | |
বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় | ২১ টি | |
বেসরকারি বালিকা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় | ০৫ টি | |
দাখিল মাদ্রাসার সংখ্যা | ৮০ টি | |
আলিম মাদ্রাসার সংখ্যা | ১৪ টি | |
ফাজিল মাদরাসা সংখ্যা | ০৯ টি | |
কামিল মাদরাসা সংখ্যা | ০১ টি | |
কওমী মাদ্রাসা | ১১৮টি | |
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা- | ৮২৬ টি | |
টেকনিক্যাল স্কুল | ০১ টি | |
ভোকেশনাল স্কুল | ০১টি | |
যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র | ০১ টি | |
টেকনিক্যাল ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট | ১২ টি | |
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় | ০১টি | |
হোমিওপ্যাথি কলেজ | ০১টি | |
পলিটেকনিক স্কুল এন্ড কলেজ | ০১টি | |
ভোকেশনাল স্কুল এন্ড কলেজ | ০১টি | |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট | ০১টি | |
পিটিআই | ০১টি | |
ভূমি সংক্রান্তঃ | ||
আয়তন: | ১৩৬৩.৭৬ বর্গ কিলোমিটার | |
মৌজা সংখ্যা: | ৪৪৬ টি | |
মোট জমির পরিমাণ: | ১০৬৪৬৭ হেক্টর (৩১২২৮৮১৪ একর) | |
আবাদী জমির পরিমাণ | ১,০৬,০০৭ হেক্টর | |
অনাবাদী জমির পরিমাণ | ৪৬০ হেক্টর | |
সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ | ৭৫,০০০ হেক্টর | |
মোট খাস জমির পরিমাণ | ১৮,৪৩৫.৫৭একর | |
বন্দোবস্তযোগ্য খাস জমির পরিমাণ | ১০,১১৫.৬৫ একর | |
মোট অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ | ১৯,৪৩০.৭৪ একর | |
আবাসন প্রকল্প | ০৫ টি | |
আশ্রয়ণ প্রকল্প | ০৭টি | |
আদর্শগ্রাম প্রকল্প | ০১ টি | |
গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প | ১০টি | |
জলমহাল | ৩৬ (বদ্ধ ২৩, উন্মুক্ত ১৩ | |
পুকুর | ১৬০১ টি | |
খাসপুকুর | ১০ টি | |
বিল | ৩১টি | |
হাট-বাজার | ১০৫টি | |
পাথরমহাল | ০৬টি | |
বালুমহাল | ০৬টি | |
বনভূমির পরিমান | ২,০৪৯ একর | |
সংরক্ষিত বনভূমির পরিমান | ২,০৪৯ একর | |
সংরক্ষিত বনভূমির পরিমান | ৬,৩৪৭ একর | |
রেঞ্জ: | ০৩ (রাংটিয়া, বালিজুরী, মধুটিলা) | |
প্রধান বৃক্ষ | শাল মহুয়া | |
আশ্রয়ণ প্রকল্প: ০৭টি | ||
উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা | ৩৫০ টি | |
ব্যারাক সংখ্যা | ৩৫ টি | |
একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প | ||
এলাকা | ৫ টি উপজেলার ৫২ টি ইউনিয়ন | |
সমিতির সংখ্যা | ৪২২ টি | |
উপকারভোগীর সংখ্যা | ২২,৯৫১ জন | |
আবহাওয়াঃ | ||
বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত | ২,১১২ মিঃমিঃ | |
গড় তাপমাত্রা | ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস | |
কৃষি সংক্রান্তঃ | ||
কৃষক পরিবারের সংখ্যা | ২৬১৮৪০ টি | |
মোট উৎপাদিত ফসল | ৮,৬৩,৪৭৭ মেঃটন | |
মোট খাদ্যশস্য | ৪,৯৩,৩৩৬মেঃটন | |
মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন | ৫,৫৭,৯৪৬ মেঃটন (১১.৫৮% গোখাদ্য/অপচয় বাদে) | |
মোট খাদ্যশস্যের চাহিদা | ২,৯৬,৩৬৩.৬২ মেঃটন | |
উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যের পরিমাণ | ১,৯৬,৯৭৩.৩৮ মেঃটন | |
প্রধান ফসল | ধান, গম, সরিষা, পাট, বাদাম, ভুট্টা, আলু ও মরিচ | |
উল্লেখযোগ্য নদী | ব্রহ্মপুত্র,ভোগাই, নিতাই, কংশ, সোমেশ্বরী, মহারশ্মি, মালিঝি | |
উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান | শাহ কামাল মাজার, গজনী, মধুটিলা ইকোপার্ক, শের আলী গাজীর মাজার, জরিপ শাহ এর মাজার, বার দুয়ারী মসজিদ, ঘাগড়া লস্কর খান মসজিদ, মাইসাহেবা জামে মসজিদ। | |
যোগাযোগ ব্যবস্থা সংক্রান্ত | ||
মোট রাস্তার সংখ্যা | ১০৫০ টি | |
পাকা/ সেমিপাকা/ পীচ রাস্তার সংখ্যা | ২৩৩ | |
দৈর্ঘ্য | ৭০১ কিঃমিঃ | |
মাটির রাস্তার সংখ্যা | ৮১৭ টি | |
দৈর্ঘ্য | ২১৪৭ কিঃমিঃ | |
ব্রীজ/ কালভার্টের সংখ্যা | ২,৮২৬ টি | |
দৈর্ঘ্য | ১৭,৭৮৮ মিঃ |
শেরপুরের সকল খবরা খবর পেতে ভিজিট করুন: https://sherpurmail.com