April 30, 2025, 8:08 pm

যৌন হয়রানির ঘটনায় উত্তাল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

শেরপুর মেইল
প্রকাশিত - Thursday, March 7, 2024
যৌন হয়রানির ঘটনায় উত্তাল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থী হেনস্তা'র প্র'তি'বা'দে মৌন মি'ছি'ল ও মোমবাতি প্র'জ্জ্বা'ল'ন কর্মসূচি। ছবি: জাককানইবি প্রেসক্লাব

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ওই বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে ওই বিভাগের প্রধান রেজুয়ান আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা তাঁকে উদ্ধার করেন। বুধবার সকাল থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সোমবার মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন ছাত্রী একই বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন।

শিক্ষার্থী হেনস্তার প্রতিবাদে 'Stand with Chowa' ব্যানারে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছবি: জাককানইবি প্রেসক্লাব

শিক্ষার্থী হেনস্তার প্রতিবাদে ‘Stand with Chowa’ ব্যানারে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছবি: জাককানইবি প্রেসক্লাব

ওই ছাত্রীর অভিযোগ, অভিযুক্ত শিক্ষক শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং পরে শ্রেণিকক্ষে এবং পরীক্ষার হলসহ নানা জায়গায় যৌন হয়রানি করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের বিচার ও বহিষ্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।  মঙ্গলবার (৫ মার্চ) ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখরের সঙ্গে দেখা করে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে ওই ছাত্রী প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের যৌন হয়রানির ঘটনার বর্ণনা করেন।

ওই ছাত্রী জানান, ২০১৯ সালে তিনি প্রথমে যখন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তখন থেকেই ওই শিক্ষক প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানি শুরু করেন। এতে সাড়া না দেওয়ায় পরে অভিযুক্ত শিক্ষক যৌন হয়রানির পাশাপাশি একাডেমিক বিষয়েও হয়রানি শুরু করেন। সম্প্রতি অভিযুক্ত শিক্ষক ভুক্তভোগী ছাত্রীর ‘একাডেমিক রিপোর্ট’ আটকে দেন। এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদের কাছে অভিযোগ করা হলে তিনি ওই শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন এবং বিষয়টি ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

বিষয়টি নিয়ে বুধবার (৬ মার্চ) সকাল থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছিলেন প্রতিবাদমুখর। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীদের একাধিক সংগঠন মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির অভিযোগ করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোট ৩১ জন ছাত্রী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা প্রমাণ হিসেবে মুঠোফোনে স্ক্রিনশট দেখান। এমন একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও বিভাগীয় প্রধান তাঁর পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সামনে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দিতে শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষক এবং বিভাগীয় প্রধানের নামফলক ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদকে তাঁর কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। বেলা পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা রেজুয়ান আহমেদকে অবরুদ্ধ অবস্থান থেকে উদ্ধার করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আবারও প্রতিবাদ মিছিল করেন।

অভিযুক্ত রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র ও সাজন সাহার নামফলক পুড়িয়ে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

অভিযুক্ত রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র ও সাজন সাহার নামফলক পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ছবি: জাককানইবি প্রেসক্লাব

 

এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. আতাউর রহমানকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক, ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ও সিন্ডিকেট সদস্য উম্মে সালমা তানজিয়া ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. এ কে এম আব্দুর রফিককে তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি মুঠোফোনে বলেন, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা রেজুয়ান আহমেদের কাছে যাই। বিষয়টি আসলে অবরুদ্ধ করে রাখার মতো নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে রেজুয়ান আহমেদকে কক্ষ থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। যৌন হয়রানির অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।’

যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে, তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। আর বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি সত্য নয়।

 

 

 


আরও পড়ুন
ThemeCreated By ThemesDealer.Com